নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সারাদেশে তামাক কোম্পানির আগ্রাসী প্ররোচনায় তামাক চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে,অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিরব ভূমিকা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেছেন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বুধবার(৯ অক্টোবর ২০২৫) বিকাল ৩টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কৈবর্ত সভাকক্ষে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী ও প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন আহমেদ। সঞ্চালনায় ছিলেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান।এবছর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— “কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য। তিনি বলেন, “তামাক চাষ ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তামাক পাতার রপ্তানি শুল্ক মওকুফ করে এ চাষকে উৎসাহিত করা হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।তিনি আরও জানান, “ধান, গমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেলেও তামাক পাতার নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিতে সরকারি কমিটি গঠন করা হয়, যা পরোক্ষভাবে তামাক চাষকে উৎসাহিত করছে।নীতি বিশ্লেষক ও আইনজীবী এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষিজমিতে তামাক চাষ বন্ধ করতে হবে। অথচ কোম্পানিগুলো নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে কৃষকদের প্রলুব্ধ করে তামাক চাষে যুক্ত করছে। সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, তামাক চাষের শীর্ষ ১০ জেলা দেশের দরিদ্রতম জেলার তালিকায়। হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রতিবছর এক শতাংশ হারে আবাদি জমি কমছে। তাই বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা, উন্নত বীজ ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান জরুরি। সরকারকে দ্রুত তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করে বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে।”
আমিনুল ইসলাম বকুল, টিম লিড, ডাস্ বলেন,সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে দেয়া হয়েছে। অথচ বিদেশি কোম্পানিগুলো বিডাকে ব্যবহার করে দেশে সিগারেট বাজার সম্প্রসারণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।শাগুফতা সুলতানা, প্রকল্প পরিচালক, এইড ফাউন্ডেশন বলেন, “তামাক কোম্পানির প্রভাবে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা জনস্বার্থের চেয়ে কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয়।”
আমিনুল ইসলাম সুজন, কারিগরি পরামর্শক, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস বলেন, “১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট গঠিত হয়। ২০১১ সাল থেকে এদিনটি জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। সরকারিভাবে দিবসটি ঘোষণা করা হলে জনগণের সচেতনতা আরও বৃদ্ধি পাবে।”
সভায় বক্তারা সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তামাক চাষ ধীরে ধীরে বন্ধ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন। তারা দ্রুত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” চূড়ান্ত করার দাবি জানান।
এছাড়া বিকল্প ফসল চাষে সহায়তা, স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান, তামাক চাষের জমিতে দ্বিগুণ ভূমি কর আরোপ, সংরক্ষিত বনভূমি ও খাসজমিতে তামাক চাষ বন্ধ, এবং তামাক পাতার উপর মওকুফকৃত ২৫% রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহালের দাবিও জানানো হয়।সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো, মানস, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, রানি, কেএইচআরডিএস, কসমস, নবনীতা মহিলা কল্যাণ সমিতি, শিশুদের মুক্ত বায়ু সেবন সংস্থা, শীল্ড, আইডাব্লিউবি, গ্রীন ফোর্সসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
Leave a Reply