★অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক—সভায় বক্তারা
বিশেষ প্রতিনিধি:
দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী অসংক্রামক রোগ, আর এসব রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো তামাক। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। শুধু স্বাস্থ্য নয়, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্যও তামাক একটি বড় হুমকি।
সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন করলেও, তামাক কোম্পানিগুলো সারাদেশে বেপরোয়াভাবে আইন লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আইনটি দ্রুত সংশোধন ও শক্তিশালী করার দাবি উঠেছে।
আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর ২০২৫) বেলা ১২টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)-এর এক সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিস বাংলাদেশের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন,তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে অধিকতর গতিশীল করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইন বাস্তবায়ন, এবং তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষার করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বক্তারা আরো বলেন, সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সকল পণ্য নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একক দায়িত্ব নয়—এক্ষেত্রে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে।
তারা আরো বলেন,ইতোমধ্যেই অনেক মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন বাণিজ্য,অর্থ,কৃষি,শিল্প ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কেও যৌথভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”
সভায় স্থানীয় সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, গবেষণা ও ক্যাম্পেইন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়াতে সরকারি অনুদান প্রদানের আহ্বান জানান।
আলোচকরা জানান, সারাদেশে ইতোমধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিগুলোর সভা নিয়মিত করা এবং আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি তোলেন তারা।
সভায় বক্তারা আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) নতুন নেশা পণ্য “নিকোটিন পাউচ”তৈরির কারখানার অনুমোদন দিয়েছে, যা তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সংবিধান, হাইকোর্টের রায় এবং সরকারের জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তারা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবিলম্বে এ ধরনের ক্ষতিকর অনুমোদন বাতিলের দাবি জানান।
সভায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)-এর অর্ধশতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে নিজেদের মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।
উক্ত সভায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আইনজীবি ও নীতি বিশ্লেষক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
Leave a Reply