* বিশেষজ্ঞরা বলছেন খাদ্য শুধু অধিকার নয়,এটি উন্নয়নের ভিত্তি|
* নাগরিকদের দাবি নিরাপদ খাবার পেতে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আজ ১৬ অক্টোবর ২০২৫, বিশ্ব খাদ্য দিবস। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য থেকে বঞ্চিত, এবং ২০২৩ সালে ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে। এই বাস্তবতায় “নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিতে সম্মিলিত প্রয়াস” শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর কৈবর্ত সভাকক্ষে। এই আয়োজনটি যৌথভাবে করেছে বিসেফ ফাউন্ডেশন, ফুড সেফটি অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (WBB) ট্রাস্ট।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, সঞ্চালনা করেন শানজিদা আক্তার, আর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিসেফ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী রেজাউল করিম সিদ্দিক।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন,খাদ্য কেবল পুষ্টিকর হলেই যথেষ্ট নয়; তা হতে হবে নিরাপদ ও সাধ্যের মধ্যে। খাদ্য অপচয় ও অসম বণ্টন এখন বৈশ্বিক সংকটের দিকে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দূর্বল ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে প্রায় ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত জীবনযাপন করছে। টেকসই নীতি, গবেষণা, প্রযুক্তি এবং কৃষকদের সহায়তার মাধ্যমেই এ সংকট কাটানো সম্ভব।”
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম,সাধারণ সম্পাদক,সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স বলেন,বাংলাদেশে খাদ্য সম্পর্কিত ২৫টি আইন থাকলেও কার্যকর কোনো বিধিমালা নেই। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় জরুরি। নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে— সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেই খাদ্য সংকট মোকাবিলা সম্ভব।”
সভায় বক্তারা আলোচনারত
সুমনা রানী দাস, ডেপুটি ডিরেক্টর
(এগ্রিকালচার), প্রশিকা বলেন,ছাদ কৃষি বা রুফ গার্ডেন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের নতুন দিগন্ত খুলেছে। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলিতে ৬৫০০টিরও বেশি ছাদ বাগান গড়ে উঠেছে, যা পরিবারগুলোকে নিরাপদ সবজির উৎসে পরিণত করেছে।”
শাহীদ আলম চৌধুরীডেপুটি ম্যানেজার, ইউগ্লেনা গ্যাংকি বলেন,শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। স্কুলভিত্তিক পুষ্টি সচেতনতা ও নিরাপদ খাবার সরবরাহ কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে গাউস পিয়ারী বলেন,খাদ্য শুধু মানবাধিকার নয়, এটি টেকসই উন্নয়নের অন্যতম স্তম্ভ। খাদ্য নিরাপত্তা ছাড়া কোনো দেশই প্রকৃত উন্নয়নের সুফল পেতে পারে না। একদিকে কোটি মানুষ অনাহারে, অন্যদিকে অপচয়— এই বৈপরীত্য দূর করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
নাগরিক ও ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়ারাজধানীর ধানমণ্ডির গৃহিণী মেহেরুন্নেসা আক্তার বলেন। বাজারে প্রতিদিনই খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল আর কীটনাশকের ভয়। সরকার শুধু অভিযান নয়, দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ খাদ্য নীতিমালা বাস্তবায়ন করুক।
তরুণ উদ্যোক্তা রিয়াজ হোসেন বলেন,ছাদ বাগান বা ঘরোয়া কৃষি উদ্যোগগুলোকে কর ছাড় বা প্রণোদনা দিলে মানুষ নিজেরাই নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহী হবে।
খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জামান বলেন,বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেই এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে।”
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন— ঢাকাস্থ আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, এইড ফাউন্ডেশন, বারসিক, ডিজেবল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল, শেরে বাংলা আইডিয়াল স্কুল, টোবাকো কন্ট্রোল রিসার্স সেলসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি।
বিশেষজ্ঞ ও অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে— খাদ্য নিরাপত্তা কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি সবার সম্মিলিত উদ্যোগের ফল। খাদ্য উৎপাদন,সংরক্ষণ,বিপণন, ও সচেতন ভোক্তা আচরণের সমন্বয় ঘটাতে পারলেই“নিরাপদ খাদ্যের বাংলাদেশ”গড়ে তোলা সম্ভব।
Leave a Reply