সিনিয়র রিপোর্টার, এস্এম উজ্জ্বল হোসেনঃ
ইতিহাসের আরেক নাম পন্ডিতপাড়া স্পোটিং/ অ্যাথলেটিক্স ক্লাব। ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১০ সালে জমিদার শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরীর ছেলে স্নেহাংশ আচার্য্য চৌধুরী কর্তৃক । এটি ময়মনসিংহ জেলা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের (১৮৯৮) পর এলাকার দ্বিতীয় প্রাচীন ক্লাব ছিল। কলকাতার ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের চেয়েও পূর্বে প্রতিষ্ঠিত ।
১৯২২ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত, ক্লাবটি ১৮ বছর অবিরাম ফুটবল লীগে চ্যাম্পিয়ন ছিল—এক অনন্য রেকর্ড তৈরী হয়েছিলো ময়মনসিংহের ফুটবল ইতিহাসে । ১৮ বছর ফুটবলের সাফল্য অবিরাম চ্যাম্পিয়ন (১৯২২–১৯৩৯)বৃহৎ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোহনবাগান সহ কলকাতার বড় বড় ক্লাবগুলোর সঙ্গে ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের মুখ প্রবীর কুমার সেন ও প্রখ্যাত কোচদের নির্মাণ পন্ডিতপাড়া স্পোটিং ক্লাব।
১৯২৭ সালে কলকাতার বিখ্যাত মোহনবাগান ক্লাব তাদের আমন্ত্রণে ময়মনসিংহে আসে এবং পণ্ডিতপাড়া ক্লাবের সঙ্গে ম্যাচও খেলে। সেই খেলায় টিকিটও বিক্রি হয়েছিল । পন্ডিতপাড়া স্পোটিং ক্লাব কলকাতার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে কখনো পরাজিত হয়নি, যা সে-সময়ের খেলোয়াড়দের উচ্চ প্রতিভার স্মৃতি বহন করে। প্রবীর কুমার সেন, ভারতের প্রখ্যাত টেস্ট উইকেটকিপার (১৯৪৮–১৯৫২), যিনি ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে স্টাম্প করেছিলেন, পণ্ডিতপাড়া ক্লাবের গর্ব—তিনি এখান থেকেই উঠে আসেন । এছাড়া ফখরুদ্দিন ও মফিজুদ্দিন, দুজন প্রখ্যাত অল-ইন্ডিয়া ক্রিকেটার, ক্লাবটির প্রভাবশালী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন এবং ময়মনসিংহে ক্রিকেটের কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন । কিংবদন্তি কোচ ফখরুদ্দিন ক্লাবে কোচ হিসেবে মার্জান ছিলেন, যার অধীনে অনেক উদীয়মান ক্রিকেটার (যেমন কামাল উজ্জামান খাঁন সাদেক) সুযোগ পেয়েছিল এই ক্লাবে।বাঁহাতি স্পিনার রামচাঁদ গোয়ালা, যিনি খুব ছোট বয়সে পণ্ডিতপাড়া ক্লাব থেকে উঠে আসেন, ও পরবর্তী সময়ে ঢাকায় খেলে স্মরণীয় কীর্তি রচনা করেন ।
স্বাধীনতার পরেও ক্লাবটি জেলা পর্যায়ের প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বারবার—এমনকি ১৮ বার পর্যন্ত শিরোপা এনেছে বলে জানা যায়।এছাড়া কোলকাতার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয় ক্রিকেট ও ফুটবলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। বর্তমানের ক্লাব ভবনটি প্রভাবশালীদের দখলে, ভবনটির দোতলায় একটি রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, ক্লাবের নাম ও ইতিহাসের কোনো চিহ্ন নেই । ময়মনসিংহের ক্লাবপাড়া অঞ্চলের অন্যতম পুরনো ক্রীড়াপ্রতিষ্ঠান এটি, বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেটে সক্রিয় ছিল ।
ক্লাব পরিচালনায় বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন, আর অর্থায়নে ক্লাবের বর্তমান সভাপতি ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
আজকের দিনে ক্লাবের ঐতিহাসিক ভবনের দ্বিতল (দোতলা অংশ) রেস্টুরেন্ট বা পার্টি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, যদিও ক্লাবের নাম বা কোনো স্মারক উক্ত ভবনে নেই—এটিকে এক ধরনের ঐতিহাসিক অবহেলা হিসেবেই দেখা হচ্ছে ।
খোঁজ নিয়ে জানাযায় ঐতিহাসিক পন্ডিতপাড়া ক্লাবের সাধারন সম্পাদক ছিলেন চন্দন মিয়া পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন ফারুক হোসেন যার কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি। এছাড়া ক্লাবের অর্থায়নে সভাপতি হোন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু যিনি ৫ই আগষ্টের পর স্বৈরাচার সরকারের দোষর হওয়ার কারণে পলাতক থাকায় বক্তব্য গ্রহণ করা যায়নি। এছাড়া বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ধারী ফারুক হোসেন তিনিও পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে ক্লাব ভবনটির রেকর্ড বিহীন সাধারন সম্পাদক ফারুক হোসেনের ছেলে ওসমান গণি সানির দখলে রেখে ওল্ড টাউন রেস্টুরেন্ট নামক একটি খাবার হোটেল পরিচালনা করছে যা অবৈধ বলে জানাযায়। এব্যপারে সানির সেলফোনে বারবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
একটি ইতিহাস এভাবে বিলুপ্ত হতে পারেনা যে পরিচয় বাংলাদেশের ঐতির্য্য বহন করে ,দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রতি সুশীল সমাজের দাবী পুনরায় পন্ডিতপাড়া স্পোটিং ক্লাবের পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে এনে ঐতিহাসিক ধারা অব্যাহত রাখার।
Leave a Reply