1. admin@durnitirsondhane.com : admin :
শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিতে সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৫ পালিত। তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন অপসারণে সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ দুই জন্ম তারিখ নিয়ে শৈলকুপার আদিল উদ্দীন কলেজে চাকরী করছেন এক ল্যাব এসিস্ট্যান্ট অস্বাস্থ্যকর পণ্যের সারচার্যের অর্থ হেলথ প্রমোশনে ব্যয় করার আহ্বান কোম্পানির প্রভাবে তামাক চাষ বৃদ্ধি: বিডা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ সাভার সরকারি কলেজ ছাত্রদলে অ-ছাত্রের নেতৃত্বে বিতর্ক আইন সংশোধন বিষয়ে তামাক কোম্পানির সাথে বৈঠক আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন:বক্তারা সাভারে ভূমিদস্যু ও অপকর্মের হোতা মেহেদী হাসান ও সুরুজ্জামান: নেপথ্যে সাবেক এমপি ডা. সালাউদ্দিন বাবু নওয়াপাড়ায় এলবি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার মানবসেবায় নিবেদিত এক আলোকবর্তিকা স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ ও তামাকমুক্ত গণপরিবহণ নিশ্চিতে লিফলেট ক্যাম্পেইন

বাংলাদেশিরা কম্বোডিয়ায় সাইবার ক্রাইমের শিকার ।

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২২
  • ৪১২ বার পঠিত

বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক নিয়ে বিদেশে জিম্মি করা, নির্যাতন করার ঘটনা বেশ পুরাতন। তবে এখন প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ কর্মীদের মোটা অঙ্কের বেতনের কথা বলে নেওয়া হচ্ছে কম্বোডিয়ায়। সেখানে গিয়ে সাইবার দাসত্বের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। একেক জনকে ১ থেকে ৫ হাজার ডলারে বিক্রি করা হচ্ছে চাইনিজ ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। প্রযুক্তিগত দক্ষ বাংলাদেশিদের নানারকম সাইবার ক্রাইমের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে কিংবা চলে আসতে চাইলেই করা হচ্ছে নির্যাতন। কম্বোডিয়া বিক্রি হয়ে সাইবার দাসত্বের শিকার বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন তাদের নির্মম নির্যাতন ও করুণ পরিস্থিতির কথা।

আইওএম বাংলাদেশের তথ্যমতে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিদেশ যান। যাদের মধ্যে অনেকেই পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তু হন। কোনও কোনও অভিবাসী ঋণ, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক বিয়ে এবং দাসত্বের শিকার হন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া দুই প্রান্তেই রয়েছে বাংলাদেশি মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা। বাংলাদেশ থেকে মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরির কথা বলে বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়। কাজের কথা বলা হলেও তাদের নেওয়া হয় কম্বোডিয়ায় ভ্রমণ ভিসায়। কম্বোডিয়াতে চক্রের বাংলাদেশি সদস্যরা চাইনিজ ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের বিক্রি করে দেয়। কখনও কখনও একজনকে কয়েক দফায় একাধিক প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করা হয়। কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে একেক জনকে ১ থেকে ৫ হাজার ডলারে বিক্রি করা হয়। কম্বোডিয়ায় পৌঁছানোর পর পরই অফিসিয়াল প্রয়োজনের কথা বলে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে রেখে দেওয়া হয় পাসপোর্ট। বিক্রি করা ছাড়াও পাসপোর্ট জিম্মি করেও অনেকের কাছ থেকে আদায় করা হয় লাখ টাকা। কেউ প্রতিবাদ করলে করা হয় নির্যাতন।

বাংলা ট্রিবিউনকে করুণ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন কম্বোডিয়ায় নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশিরা। তবে পরিচয় প্রকাশ পেলে আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হতে পারে—এই শঙ্কায় তারা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন। এ কারণে ভুক্তভোগীদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হচ্ছে।

সম্রাটের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। ফার্নিচার, ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ব্যবসা করতেন, সঙ্গে ফ্রিল্যান্সিং করে ভালোই চলছিল তার জীবন। তবে করোনার সময় লোকসানে পড়ে ধাক্কা খান সম্রাট। বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। প্রথমে সৌদি আরব, পরে দুবাই যাবার চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে গ্রাম্য দালালের কথায় কম্বোডিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। মাসে ১ হাজার ডলার বেতন পাবার আশায় ২০ মার্চ কম্বোডিয়া যান। এ পর্যন্ত আসতে তাকে খরচ করতে হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সম্রাট বলেন, কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশি লোকজন আমাকে রিসিভ করে, তারপর চীনা একটি কোম্পানিতে নিয়ে যায়। ২১ তারিখ সেখানে আমি কাজে যোগ দেই। আমাদের বেশ কিছু সিমকার্ড দিয়ে বলা হয় ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খুলতে। তখনও আমরা বুঝতে পারিনি আমাদের প্রতারণার কাজ করতে হবে। পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা নিতে আমাদের বলা হয়।

নির্যাতন প্রসঙ্গে সম্রাট বলেন, কম্বোডিয়ায় কম্পিউটারের কাজ বলেন আর আইটি কাজ করেন, সবাইকে সাইবার ক্রাইমের কাজ করতে হয়। অনলাইনে বিভিন্ন রকমের প্রতারণা, হ্যাকিং এসব কাজ করতে হয়। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক চাইনিজ লোকজন। এসব কাজ কেউ করতে না চাইলে তাকে মারধর করা হয়। একটা রুমে আটকে রাখে, খাবার দেয় না। আবার কেউ কাজ করলে মাসে মাসে বেতন যে দেবে তাও দেয় না। পাসপোর্ট আটকে রাখে। বাংলাদেশি দালালদের যখন বললাম, তারাও কোনও কথা বলে না। তারা জেনে-শুনে আমাদের এখানে বিক্রি করে দিয়েছে। পাসপোর্ট ফেরত চেয়েছি,দেশে চলে আসতে চেয়েছি, এ কারণে আমাদের ফোন কেড়ে রেখে দিয়েছিল। পাসপোর্ট ফেরত চাইলে দালাল আমার কাছে ১ হাজার ডলার চায়।

সম্রাটের মতো বাকিদের পরিস্থিতিও একই রকমের। কম্বোডিয়ায় বিমানবন্দর থেকে তাদের প্রথমে বাংলাদেশি দালালদের ক্যাম্পে রাখা হয়। তারপর চাইনিজ কোম্পানিতে বিক্রি করা হয়। ওই সব প্রতিষ্ঠানে একই স্থানে কাজের জায়গা, থাকার জায়গা ও খাবারের জায়গা। ক্যাম্পাসে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে, সেখান থেকে বাইরে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না। পাচারের শিকার ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। প্রত্যেকেই সাইবার দাসত্বে থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে নির্যাতনের শিকার। কেউ কেউ কয়েক দফা নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণরক্ষায় সাইবার দাসত্ব মেনে নিয়ে কাজ করছেন। কম্বোডিয়ার কিছু জেলায় চাইনিজ কোম্পানিগুলোর শাখা রয়েছে। বেশিরভাগই সিহানুকভিল (Sihanoukville), কাম্পট (Kampot), কান্দাল (kandal), পোয়েপেট (Poipet) এবং কিছু সীমান্ত এলাকায়। এসব চাইনিজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কম্বোডিয়ান সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সম্পর্ক থাকায় পুলিশে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা। যদি কোনও ভুক্তভোগী কম্বোডিয়ান স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনের কাছে চাইনিজ কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তবে তার জন্য বিপদ আরও বেশি। পুলিশ ও প্রশাসন চাইনিজ কোম্পানির লোকদের জানিয়ে দেয় কে অভিযোগ দিয়েছে। তখন তারা (চাইনিজ) অভিযোগকারীকে নির্যাতনের জন্য অন্ধকার ঘরে নিয়ে যায় এবং খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

সূত্র জানায়, ১৫-২০ জন বাংলাদেশি এই পাচার চক্রের সদস্য কম্বোডিয়ায় বসবাস করে। তারা বাংলাদেশি দালালদের সহায়তায় কম্বোডিয়ায় বাঙালিদের এনে সাইবার স্ক্যাম সেন্টারে বিক্রি করে।

একইরকম পরিস্থিতির শিকার মিয়া হোসেন। তিনি বলেন, এখানে এমন অনেক লোক আছে যারা এখনও বন্দি। বের হয়ে আসতে পারছে না। দালাল তাদের পাসপোর্ট আটক করে রাখছে। কিছু মানুষ না খেয়ে দিন পার করছে। আমি এসেছি ছয় মাস হয়েছে। আমাকে কাজ দেবে বলে বিক্রি করে দিয়েছে।

মিয়া হোসেন বলেন, আমি সাইবার দাসত্ব থেকে বের হতে চেষ্টা করি। দালাল ও চাইনিজ কোম্পানিকে টাকা দিয়ে চার মাস পরে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এখনও আমার পাসপোর্ট দেয়নি। ৩ মাসের ভিজিট ভিসায় এসেছিলাম। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে এখন অনেক টাকা জরিমানা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, আমার মতো এমন অনেক আছে, আমাদের এখান থেকে উদ্ধার করে নিন।

রোমহর্ষক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন ফরহাদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশি দালাল আমাকে একটা চাইনিজ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। সেই কোম্পানি কিছু দিন পর বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তারা বন্ধ করার আগে আমাকে অন্য আরেকটি চাইনিজ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। আমাকে অনেক নির্যাতন করেছে চাইনিজরা। বাংলাদেশি দালালকে বললাম, আমি দেশে যেতে চাই, তারা দিচ্ছে না। তারা শর্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে দুজনকে এনে দিতে হবে অথবা ৫ হাজার ডলার দিতে হবে।

আতঙ্কিত কণ্ঠে জামাল মিয়া বলেন, আমি আছি চাইনিজ কোম্পানিতে। এখানে আরও তিন জন বাঙালি আছেন। এখানে আমি যদি কোনও কথা বলি মাফিয়া দালালরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমি দেশে আসতে চাই। আমি এখানে প্রতিদিন মৃত্যুর যন্ত্রণার মতো দিন পার করছি।

কম্বোডিয়ায় কতজন বাংলাদেশি সাইবার দাসত্বের শিকার তার সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই। নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকই আহত হচ্ছেন। তবে কেউ মারা গেছে কিনা তার নিশ্চিত কোনও সূত্রে জানা যায়নি। কম্বোডিয়ার প্রভাবশালীদের সঙ্গে চাইনিজ এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক থাকায় মৃত্যুর পর দুর্ঘটনাজনিত বা আত্মহত্যা হিসেবে দেখানো হয়। হত্যার ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় না।

কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের কোনও দূতাবাস নেই। তবে দেশটির প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম কল্যাণ উইং) মো. ফাহাদ পারভেজ বসুনিয়া বলেন, কম্বোডিয়ায় এসে যারা বিপদে পড়েছেন, অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা তাদের আউটপাসে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করছি। তবে তারা কম্বোডিয়ায় আসার আগে খোঁজ নিয়ে এলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তো না। বিপদে পড়ে তারপর দূতাবাসে যোগাযোগ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2022 Durnitir Sondhane by Uzzal Hossain
Theme Customized By Theme Park BD