1. admin@durnitirsondhane.com : admin :
বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সাভার সরকারি কলেজ ছাত্রদলে অ-ছাত্রের নেতৃত্বে বিতর্ক আইন সংশোধন বিষয়ে তামাক কোম্পানির সাথে বৈঠক আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন:বক্তারা সাভারে ভূমিদস্যু ও অপকর্মের হোতা মেহেদী হাসান ও সুরুজ্জামান: নেপথ্যে সাবেক এমপি ডা. সালাউদ্দিন বাবু নওয়াপাড়ায় এলবি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার মানবসেবায় নিবেদিত এক আলোকবর্তিকা স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ ও তামাকমুক্ত গণপরিবহণ নিশ্চিতে লিফলেট ক্যাম্পেইন মানবিক পুলিশ অফিসার কাজী ওয়াজেদ আলী–দায়িত্বশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত যশোর ট্রাক–ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন-২০২৫ অনিয়মের জালে জর্জরিত বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়: শিক্ষার মান অবনতির শঙ্কা ডেমরা মাতুয়াইল ভূমি অফিসে ঘুষ–দুর্নীতির মহোৎসব শিকড়ের খোঁজে প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম জনি

রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এখন আওয়ামী লীগের লিয়াজো অফিস

  • আপডেট সময় : রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫২ বার পঠিত

সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি সাইফুজ্জামান শিখর ও আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত সিকদারের স্ত্রী ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য!
২০১২সালে রাজশাহীতে যাত্রা শুরু করে বেসরকারী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরুর পর থেকেই বেশ নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়ে রাজশাহী অঞ্চলে। ফলে প্রায় এক যুগ ধরে রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে একচেটিয়া ব্যবসা করতে থাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।দেশের মোটরসাইকেল কম্পানী রানার গ্রুপ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তিতে কেবলমাত্র তাদের কয়েকজন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কোষাধ্যক্ষের বাইরের দুই-একজন সদস্য পদ ধরে রাখতে পেরেছিলেন।
১৩ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে অন্তত ৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা বা তাদের অনুসারী।
এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য পদ দখল করে তাঁরা শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে শেসন ফি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের নেতাদের একাউন্টে দেওয়া লাগত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ফলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করা ছাড়াও তাদের তালিকা ধরে নানাভাবে হয়রানি করা হতো বলেও অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আন্দোলনও করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক এ.কে.এম কামরুজ্জামান খান বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি গত সংসদ নির্বাচনে পাবনা-২ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ফলে তাঁকে ঢাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের অপর পক্ষের নেতাকর্মীরা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে ওই সময় চাউর হয়। এ নেতা রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের ঘনিষ্ট। ফলে ডাবলু সরকারেরও একটা প্রভাব ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এছাড়াও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর স্ত্রী রাশিদুল আরা হাসনিন, মাগুরার সাবকে এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের স্ত্রী সিমা রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের স্ত্রী মাহমুদা আলী শিকদার, আওয়ামীপন্থি রাবির সাবেক ভিসি সাইদুর রহমান খানের স্ত্রী কামরুন রহমান খান। এর বাইরে সাবরিনা বারি, মোহাম্মদ আলী দ্বীন, তসলিম উদ্দীন আহম্মেদও আওয়ামী লীগপন্থি বা বিভিন্ন পদে রয়েছেন। আওয়ামীপন্থি মোহাম্মদ আলী দ্বীন রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের ব্যবসায়ীক পার্টনার ও নওগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি।

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহীর বেসরকারী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কারিগর হলো রানার গ্রুপ।
এ গ্রুপটির চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও আওয়ামী লীগের নেতারা সেখানে ভাগ বসাতে থাকেন শুরু থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমতি পেদে আওয়ামী লীগের নেতাদের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য করা হয়। আবার কেউ কেউ সদস্য না হয়েও ভাগ পেতেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে শেসন ফি বাবাদ আয় করা অর্থ থেকে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের একেকজনের মোট শেসন ফি সর্বনিম্ন ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে শুরু করে ৬ লাখ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক আয় গিয়ে দাঁড়ায় কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা। এই আয়ের সিংহভাগই চলে যেত ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্যদের একাউন্টে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুরু থেকেই জেঁকে বসেছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধূরী। তবে চালাক খালিদ মাহমুদ নিজে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য না হয়ে তাঁর স্ত্রীকে সে পদে বসান। একইভাবে পাবনার আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান খান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মাগুরার সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান শেখর, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী শিকদারই মূলত বিশ্ববিদ্যালয়টির নেপথ্যের হর্তা-কর্তা ছিলেন।

লিয়াকত শিকাদার অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে সম্প্রতি লিয়াকত সিকদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আলী সিকদার এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডির ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি হলেন আওয়ামী পন্থি শিক্ষক ও রাবির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার শাহা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগসাজস করে ভিসি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে বিভাগের শিক্ষকদের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করতেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম মাহমুদুল হাসান মুন্না অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের সহপাঠি সাকিব আঞ্জুম আন্দোলন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ হর্তা-কর্তা হলেন আওয়ামী লীগপন্থি। এমনকি ট্রাস্টি বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য হলেন আওয়ামী লীগের নেতারা বা তাঁদের আত্মীয়-স্বজন। এ কারণেই তাঁদের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে আন্দোলনের সময়। শুনেছি ওই নেতারা এখান থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে যায় প্রতিমাসে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত ১২ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা অন্তত হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান কোনো অর্থ নেন বলে কেউ জানে না। যা আয় হয়, তার সিংহ ভাগ চলে যায় আওয়ামী লীগের নেতাদের পকেটে।’
তবে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানকে পাওয়া যায়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত ভিসি আনন্দ কুমার শাহা বলেন, ‘আন্দোলনে আমাদের কোনো বিরোধীতা করার প্রশ্নই আসে না। তবে অনেক শিক্ষক আন্দোলনে যোগ দেয়নি এটা সঠিক।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো অর্থ তোছরুপ হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। কারা টাকা নেয় কিভাবে আমি বলতে পারব না।’
এ দিকে সর্বশেষ জানাগেছে, ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাইফুজ্জামান শিখর,লিয়াকত সিকদার গং পালিয়ে বিদেশ চলে গেলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখভাল করছেন উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা। তিনি রাজশাহীতে ” র” এর এজেন্ট হিসাবে পরিচিত। ৫ আগষ্টের পরও তিনি প্রশাসনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয় দেন। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আওয়ামী লীগের লিয়াজো অফিস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। উপাচার্য আনন্দ সাহার সাথে নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করছেন পলাতক খালিদ মাহমুদ, সাইফুজ্জামান শিখর, লিয়াকত সিকদার গং। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ও তার উপাচার্য এবং কিছু শিক্ষককে ২৪ ঘন্টা গোয়েন্দা সংস্থার নজরে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজশাহীর সুধীজনরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2022 Durnitir Sondhane by Uzzal Hossain
Theme Customized By Theme Park BD