হালদার পাড়ে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ জরুরি বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
তামাক চাষ বাড়লে বিলুপ্ত হবে মাছ ,হুমকির মুখে খাদ্য নিরাপত্তা
স্টাফ রিপোর্টার
হালদা নদীর তীরে তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ায় মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, তামাক চাষ অব্যাহত থাকলে একসময় প্রাকৃতিক মাছের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
সংক্ষেপে,বিশেষজ্ঞদের মতামত
• তামাক চাষে হালদা নদীর প্রাকৃতিক মাছ বিলুপ্তির পথে।
• খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ছে।
• কৃষকরা ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছেন।
• সরকারি কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও কোম্পানির আগ্রাসন পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে।
আজ রোববার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, উবিনিগ, তাবিনাজ ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া) চূড়ান্ত করা জরুরি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল টকশোতে বিশেষজ্ঞ বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
হালদায় মাছের প্রজননে হুমকি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ড. মোঃ মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদা অববাহিকার মনিকছড়ি এলাকায় শত শত একর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। এতে প্রচুর রাসায়নিক সার ও বর্জ্য নদীতে মিশে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র ব্যাহত হচ্ছে। অথচ হালদাকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হলেও এর আশপাশে তামাক চাষ বন্ধ হয়নি—যা নীতিগত অসঙ্গতি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খাদ্য সংকট ও পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা
উন্নয়ন পরামর্শক নাসির উদ্দীন শেখ বলেন, তামাক চাষে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, পরাগায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কীটপতঙ্গ বিলুপ্ত হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনে সংকট তৈরি হবে। একই সঙ্গে গবাদিপশু ও পশুখাদ্যের জন্যও তামাক ক্ষতিকর। তিনি তামাক পাতার ওপর পুনরায় ২৫% রপ্তানি শুল্ক আরোপের দাবি জানান।
কোম্পানির প্রভাব ও কৃষকদের সংকট
ইপসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো: আরিফুর রহমান বলেন, বিদ্যমান আইনে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় কোম্পানিগুলো কৃষকদের প্রলুব্ধ করছে। তারা কৃষকদের তামাকের লাভজনকতা সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। অথচ বাস্তবে আয়-ব্যয়ের তুলনায় ১৪টি ফসলের মধ্যে তামাকের অবস্থান ১২তম। বিকল্প ফসল উৎপাদনে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণ দিলে তারা তামাকের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারবেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের দায়
বিশিষ্ট আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক মাহবুবুল আলম বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তামাক কোম্পানির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তামাক চাষ কমিয়ে আনার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় তামাকের পরিবর্তে মসলা চাষ করলে প্রতিবছর প্রায় ৪হাজার কোটি টাকার আমদানি কমানো সম্ভব।
কৃষকদেরকে দাসত্বের শিকার করা হচ্ছে
উবিনিগ’র পরিচালক সীমা দাস সীমু জানান, তামাক চাষের ফলে রবি মৌসুমের উৎপাদন কমছে। কৃষকদেরকে চড়া সুদে ঋণ ও সার-বীজ সরবরাহ করা হয় এবং পরে পাতার মূল্য কমিয়ে দিয়ে তাদেরকে দারিদ্র্যের চক্রে আটকে রাখা হয়।
কঠোর নীতিমালা জরুরি
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি তামাক চাষের জমিতে দ্বিগুণ ভূমি কর আরোপ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করা এবং বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন। পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করার বিকল্প নেই।
Leave a Reply